১৯৯০-র বিশ্বকাপ ফাইনাল। অপ্রতিরোধ্য অশ্বমেধের মতো ছুটে চলেছিল মারাদোনার নীল সাদা আলবিসেলেস্তে। কিন্তু ফাইনালে সেই জয়রথ থামলো জার্মানির কাছে। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল দিয়েগোর আর্জেন্টিনার। পেনাল্টি থেকে গোল করে জার্মানির হতে বিশ্বকাপ তুলে দিয়েছিলেন আন্দ্রেয়াস ব্রেমে। পরবর্তী সময়ে জার্মানি কাপ জিতলেও আর্জেন্টিনার সেই খড়া কাটাতে সময় লেগেছিল ৩৬ বছর। কাপজয়ী সেই কিংবদন্তি ফুটবলারের জীবনাবসান হয়েছে মঙ্গলবার। দুমাস আগেই পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন আরেক কিংবদন্তী ফ্রানৎজ বেকেনবাউয়ার। ১৯৯০ বিশ্বকাপজয়ী দলের কোচের ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। গুরুর পরে এবার শিষ্যও চলে গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। জার্মান সংবাদ মাধ্যমকে প্রয়াত ব্রেমের স্ত্রী সুসানে শেফার জানিয়েছেন, আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। মূলত লেফট ব্যাক হিসেবে দলে থাকলেও, দলের স্বার্থে গোল করতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের প্রাক্তন তারকা। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮, টানা দুই মরসুম এই ঐতিহ্যশালী জার্মান ক্লাবে খেলেছেন। ১৯৮৭ সালে ক্লাবকে উপহার দিয়েছিলেন বুন্দেশলিগা খেতাবও। ক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁর প্রয়াণে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। শোকবার্তায় বলা হয়েছে, ‘অ্যান্ডি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল অমলিন থেকে যাবে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে কখনো ভুলবে না বায়ার্ন মিউনিখ।’
বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়াও ব্রেমে খেলেছিলেন ইতালির ঐতিহ্যশালী ক্লাব ইন্টার মিলানের হয়ে। ক্লাবকে তাঁর সময়কালে উপহার দিয়েছেন সেরি-আ খেতাব। দেশের জার্সিতে জিতেছিলেন ৮৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। মোট গোল ছিল ৮টি। প্রাক্তন সতীর্থের আকস্মিক প্রয়াণে বিস্মিত হয়ে যান ১৯৯০ বিশ্বজয়ী জার্মানি দলের আর এক তারকার রুডি ফোলার। তিনি বিবৃতি দিয়েছেন, ‘ সেই বিশ্বকাপে অ্যান্ডিই ছিল আমাদের দলের সেরা নায়ক। কিন্তু সেটাই ওর একমাত্র পরিচয় নয়। মাঠের বাইরে ব্রেমে ছিল আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওকে আর দেখতে পাবো না, সেটা ভাবতেই পারছি না।’
শোকবার্তা জানিয়েছেন প্রাক্তন জার্মান অধিনায়ক কার্ল হাইনজ রুমেনিগে। তিনি বলেন, ‘১৯৮৬ বিশ্বকাপে খেলেছি ব্রেমের সঙ্গে। ওর মতো সতীর্থ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। ও ছিল দলের প্রতি একশো শতাংশ দায়বদ্ধ। ওই সময় মাঠে আমরা সবচেয়ে বেশি ওর উপরেই নির্ভর করতাম।’
এছাড়াও শোকবার্তা জানিয়েছেন ১৯৯০ বিশ্বকাপজয়ী দলের প্রাক্তন জার্মান অধিনায়ক লোথার ম্যাথেউজ। শোকজ্ঞাপন করেছেন তাঁর সতীর্থ য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান। স্বাভাবিকভাবেই ব্রেমের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা ফুটবলবিশ্বে।