বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে অবশ্যই একদিন দেশের জার্সিতে ক্রিকেট খেলবে। ছেলেরও সাধ জাগে একদিন বাবার স্বপ্ন তাকে পূরণ করতেই হবে। দুজনের বহু প্রতীক্ষা, বহু সংগ্রাম, বহু বঞ্চনার পরে অবশেষে স্বপ্নপূরণ। মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেন ধরে ঝুলতে ঝুলতে ক্রিকেট ব্যাগ কাঁধে ধাওয়া করেছেন স্বপ্নের। সাথে থেকেছেন পিতা। বৃহস্পতিবার রাজকোটে পিতা পুত্রের স্বপ্ন মিলেমিশে সৃষ্টি হলো এক অনাবিল ক্রিকেটিয় আবেগ। এহেন আখ্যান শুধু ক্রিকেটে নয়, ক্রীড়া ইতিহাসেই বিরল। যা দেখে মনে হয়, ক্রিকেট কেনই বা ‘জেন্টলম্যানস’ গেমে আটকে থাকবে। এ খেলা তো সবার। ভারতের প্রতিটি কোণায় যা স্বতন্ত্র ধর্মের আখ্যা বহন করে।
চোখে জল মুছে পিতার বিবৃতি, ‘অনিল কুম্বলে স্যার যখন দেশের টেস্ট ক্যাপ হাতে তুলে দিচ্ছেন দেখে আর চোখের জল সামলে রাখতে পারিনি।’ ধরা গলায় আবেগাপ্লুত পিতার সংযোজন, ‘ এইটুকু অপেক্ষা এমনকি! আমরা দুজনে এই মুহূর্তটার জন্য তো কত দিন অপেক্ষা করে থেকেছি।’ ব্যাট হাতে ছেলের মাঠে নামা প্রসঙ্গে বলেন গর্বিত পিতা। ছেলের অভিষেক টেস্ট দেখতে নাকি তিনি আসতেই চাইছিলেন না। সূর্যকুমার যাদবের দৌলতে মাঠে তিনি। ছেলের এই বিশেষ দিনে তাই সূর্যকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি তিনি। তিনি সূর্য প্রসঙ্গ নিজেই উত্থাপন করে বলেন, ‘ সূর্যই বললো স্যার এত গর্বের একটা মুহূর্ত, বিরল একটা মুহূর্ত আপনি মাঠে যান। ও নিজের উদাহরণ দিয়ে বলল যখন ওর অভিষেক হয়েছিল ওর পিতা মাতা মাঠে এসেছিল।’
মাঠে নেমেও চূড়ান্ত অধ্যাবসায়ের পরিচয় দিলেন সরফরাজ। তারপরেই আসে রাজকোটের সেই অনবদ্য ইনিংস। মার্ক উডের জোরে বল। বেন স্টোকসের পুরো লেগের দিকটি ঘিরে থাকা। দুটি মিড উইকেট। ডিপ ফাইন লেগ, স্কোয়ার লেগ। এক চক্রব্যূহ রচনা করেছে যেন ইংল্যান্ড শিবির। জিমি অ্যান্ডারসন আর উডের দ্বৈত আক্রমণ সামলে চরম সংযমের পরিচয় দিলেন এই তরুণ। ম্যাচ পরবর্তী সময় তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, কেমন লেগেছে অভিষেক টেস্টে রান পেয়ে? তিনি স্পষ্টত জানান, ‘কাঁধের বোঝা খানিক হালকা হয়ে গেল বলে মনে হচ্ছে। এই দিনটার জন্য আমরা সকলে মিলে এত অপেক্ষা করেছিলাম।’
তাঁর ভাই মুশির খানও অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন। দুর্দান্ত সেঞ্চুরিও করেছেন। জোড়া রত্নের পিতার আশা একদিন দুই ভাই অবশ্যই দেশের জার্সিতে ব্লু-ব্রিগেডের প্রতিনিধিত্ব করবে। সলতে পাকানোর কাজটা গতকাল হয়ে গেছে। সরফরাজের উইকেটের পর রোহিতের প্রতিক্রিয়ায় বলে দিয়েছিল, তাঁর গুরুত্ব দলে কতখানি। এখন সময় শুধু সামনে এগোনোর।