বিতর্ক পিছু ছাড়লো না শেষদিনেও, তবু বঙ্গকোচ হিসেবে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত মনোজের গলায়

বাংলার নায়কের বিদায়ের দিনে সংবর্ধনার কমতি ছিল না বাংলার ক্রিকেট বোর্ডের তরফে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের অধিকাংশটাই এসেছে ইডেনে তাঁর ঘরের মাঠ থেকে। রঞ্জিত ট্রফির পরবর্তী পর্বে যেতে পারেননি তিনি। স্বপ্ন অধরা থাকলেও বাংলা ক্রিকেটের এক অধ্যায়ের শেষ দিন ছিল ক্রিকেট উদ্যানে।

author-image
Manoj Kumar
New Update
Monoj Tiwary (Source: X)

Monoj Tiwary (Source: X)

বিহারের শেষ উইকেট পতনের পরেই দৌড়ে পিচে চলে যান তিনি। গিয়ে প্রণাম করে মাটি ছুঁয়ে আকাশের দিকে ম্লান দৃষ্টি। শেষ বারের মতো বাংলার জার্সি গায়ে ইডেনের বাইশ গজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের অধিকাংশটাই এসেছে ইডেনে তাঁর ঘরের মাঠ থেকে। তাই শেষ মুহূর্তে প্রণাম রণক্ষেত্রকে। ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা লাগালেন মনোজ তিওয়ারি। সতীর্থরা অপেক্ষা না করে তাকে কাঁধে তুলে নিলেন।

বাংলার নায়কের বিদায়ের দিনে সংবর্ধনার কমতি ছিল না বাংলার ক্রিকেট বোর্ডের তরফে। ক্রিকেট এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের পক্ষ থেকে সোনার জল করা ব্যাট তুলে দেওয়া হয় বাংলার অধিনায়কের হাতে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয় মনোজকে। বর্তমান ক্রিকেটার থেকে প্রাক্তন তারকা কেউই উপস্থিত হতে বাকি ছিলেন না এই অনুষ্ঠানে। অতিথি তালিকা আলো করে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অনুষ্টুপ মজুমদার, লক্ষ্মীরতন শুক্লাসহ বহু তারকা। বর্তমান থেকে প্রাক্তন হওয়ার দিনে পাশে পেয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদেরও। রঞ্জিত ট্রফির পরবর্তী পর্বে যেতে পারেননি তিনি। স্বপ্ন অধরা থাকলেও বাংলা ক্রিকেটের এক অধ্যায়ের শেষ দিন ছিল ক্রিকেট উদ্যানে। বহু ক্রিকেটপ্রেমের চোখের কোণ জলে ভরে গেল এ দিন।

মঞ্চে উঠে মনোজকে বিশেষ বার্তা দিয়ে গেলেন কিংবদন্তি প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ একদিন সকলকেই ক্রিকেট ছাড়তে হয়। আমাকেও হয়েছে। তবে ড্রেসিংরুমে না থাকতে পারার যে অভাব সেটা সব সময় অনুভব করি। মাঠে নেমে আগের মত পরীক্ষার দিতে হবে না। কঠিন পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করতে হবে না। তবু যেহেতু তুমি তরুণ, খেলাধুলা নিয়ে অনেক কাজ করার সময় পাবে।’

এই প্রসঙ্গেই প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত বঙ্গ অধিনায়কের গলায়। ক্রিকেটার হিসেবে চারবার রঞ্জি ফাইনালে পৌঁছলেও জেতার স্বপ্ন অধরাই থেকেছে বার বার। কিন্তু রঞ্জি জেতার স্বপ্ন এখনো হারিয়ে যায়নি মনোজের। ভবিষ্যতে বাংলা দলের কোচ হিসেবে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তিনি জানান, ‘ ক্রিকেট ছেড়ে দিলেও রঞ্জি জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে বাংলার কোচ হিসেবেও যোগদান করতে পারি। বাংলাকে ট্রফি দেয়ার স্বপ্ন কখনো শেষ হবে না। আগামীতে এই পদক্ষেপ নিয়ে অবশ্যই চৰ্চা করবো।

তবু বিতর্ক উস্কে দিলেন জাতীয় দলে খেলা প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। চিদম্বরম স্টেডিয়ামে স্বপ্নের ফর্মে থাকা সুনীল নারিনের বিরুদ্ধে শতরান করে মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের। বহু বাঙালির চোখ স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরবর্তীতে আর এক তারকা উত্থানের আভাসে। যদিও সুখ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি তাঁর কেরিয়ারে।

তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট জীবনে বেশ কিছু উত্থান ও পতনের সাক্ষী। অবসরের দিনেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে প্রশ্ন করতে চাই, শতরান করার পরেও কেন জাতীয় দল থেকে বাদ পরলাম? এই আক্ষেপ হয়তো কোনদিনও যাবে না। এত সাফল্যের পরেও মনে হয় ভারতীয় দলে নিয়মিত আমার খেলা উচিত ছিল।’

দিনের শেষে উষ্ণ আলিঙ্গনে মনোজকে বিদায় জানান ভক্তরা।

 

Sports News